ইন্স্যুরেন্স পলিসির গুরুত্বপূর্ণ টার্মসমূহ

 ইন্স্যুরেন্স পলিসির গুরুত্বপূর্ণ টার্মসমূহ


ইন্স্যুরেন্স পলিসির গুরুত্বপূর্ণ টার্মসমূহ
ইন্স্যুরেন্স পলিসির গুরুত্বপূর্ণ টার্মসমূহ


(Insurance Policy Key Terms Explained)

ইন্স্যুরেন্স করার সময় অনেক ইংরেজি ও টেকনিক্যাল শব্দ ব্যবহার করা হয়, যেগুলো না বুঝে পলিসি নিলে ভবিষ্যতে বড় সমস্যায় পড়তে হয়। তাই ইন্স্যুরেন্স নেওয়ার আগে এই টার্মগুলো পরিষ্কারভাবে জানা খুবই জরুরি।


১. ইন্স্যুরেন্স পলিসি (Insurance Policy)

ইন্স্যুরেন্স পলিসি হলো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ও গ্রাহকের মধ্যে একটি আইনগত চুক্তি
এই চুক্তিতে উল্লেখ থাকে—

  • কী কী কভার করা হবে

  • কত টাকা প্রিমিয়াম দিতে হবে

  • কতদিন কভারেজ থাকবে

  • কোন শর্তে ক্লেইম পাওয়া যাবে

👉 পলিসি ডকুমেন্টই চূড়ান্ত প্রমাণ।


২. পলিসিহোল্ডার (Policyholder)

যিনি ইন্স্যুরেন্স পলিসিটি কিনেছেন এবং প্রিমিয়াম পরিশোধ করেন, তিনিই পলিসিহোল্ডার।

উদাহরণ:
রফিক যদি নিজের নামে লাইফ ইন্স্যুরেন্স করেন, তাহলে রফিকই পলিসিহোল্ডার।


৩. ইন্স্যুরড (Insured)

যার জীবন, স্বাস্থ্য বা সম্পদ ইন্স্যুরেন্সের আওতায় আছে, তিনি ইন্স্যুরড।

অনেক সময় পলিসিহোল্ডার ও ইন্স্যুরড একই ব্যক্তি হন, আবার আলাদা হতে পারেন।


৪. নমিনি (Nominee)

নমিনি হলো সেই ব্যক্তি, যিনি পলিসিহোল্ডারের মৃত্যু হলে ইন্স্যুরেন্সের টাকা পাবেন।

উদাহরণ:
স্বামী পলিসি করে স্ত্রীকে নমিনি করলেন।

👉 নমিনি ঠিকভাবে আপডেট করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।


৫. প্রিমিয়াম (Premium)

প্রিমিয়াম হলো ইন্স্যুরেন্স কভারেজ পাওয়ার জন্য নিয়মিত যে টাকা দিতে হয়।

প্রিমিয়াম নির্ভর করে—

  • বয়স

  • ঝুঁকি

  • কভারেজের পরিমাণ

  • পলিসির মেয়াদ


৬. সাম অ্যাসিউরড (Sum Assured)

সাম অ্যাসিউরড হলো—
👉 ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি সর্বোচ্চ যে পরিমাণ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

উদাহরণ:
সাম অ্যাসিউরড ১০ লাখ টাকা হলে, সর্বোচ্চ ১০ লাখ পর্যন্ত ক্লেইম পাওয়া যাবে।


৭. পলিসি টার্ম (Policy Term)

পলিসি টার্ম মানে—
👉 ইন্স্যুরেন্স কত বছরের জন্য কার্যকর থাকবে।

যেমন: ১০ বছর, ২০ বছর, ৩০ বছর।


৮. ম্যাচিউরিটি (Maturity)

পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়াকে ম্যাচিউরিটি বলা হয়।

  • লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ম্যাচিউরিটিতে টাকা পাওয়া যায়

  • টার্ম ইন্স্যুরেন্সে ম্যাচিউরিটিতে টাকা পাওয়া যায় না


৯. ক্লেইম (Claim)

ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করাকে ক্লেইম বলা হয়।

ক্লেইম হতে পারে—

  • মৃত্যু ক্লেইম

  • স্বাস্থ্য ক্লেইম

  • দুর্ঘটনা ক্লেইম


১০. ওয়েটিং পিরিয়ড (Waiting Period)

ওয়েটিং পিরিয়ড হলো—
👉 পলিসি শুরু হওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়, যার মধ্যে কিছু রোগ বা সুবিধার জন্য ক্লেইম করা যায় না।

বিশেষ করে হেলথ ইন্স্যুরেন্সে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।


১১. প্রি-এক্সিস্টিং ডিজিজ (Pre-existing Disease)

পলিসি নেওয়ার আগে যে রোগ বা অসুস্থতা ছিল, সেটাই প্রি-এক্সিস্টিং ডিজিজ।

👉 বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ২–৪ বছর পর এই রোগ কভার হয়।


১২. এক্সক্লুশন (Exclusion)

যেসব বিষয় বা ক্ষতি ইন্স্যুরেন্সে কভার করা হয় না, সেগুলোকে এক্সক্লুশন বলা হয়।

উদাহরণ:

  • আত্মহত্যা (প্রথম ১–২ বছর)

  • মাদকাসক্ত অবস্থায় দুর্ঘটনা


১৩. ডিডাক্টিবল (Deductible)

ডিডাক্টিবল হলো—
👉 ক্লেইমের সময় নিজের পকেট থেকে যে অংশ দিতে হয়।

উদাহরণ:
মোট বিল ১ লাখ, ডিডাক্টিবল ১০ হাজার → ইন্স্যুরেন্স দেবে ৯০ হাজার।


১৪. কো-পেমেন্ট (Co-payment)

কো-পেমেন্ট মানে—
👉 ক্লেইমের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ গ্রাহক নিজে বহন করবেন।

যেমন: ২০% কো-পেমেন্ট।


১৫. গ্রেস পিরিয়ড (Grace Period)

প্রিমিয়াম দেওয়ার নির্ধারিত তারিখ পার হওয়ার পর যে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়, সেটাই গ্রেস পিরিয়ড।

👉 এই সময়ে পলিসি বাতিল হয় না।


১৬. রিনিউয়াল (Renewal)

পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আবার চালু করাকে রিনিউয়াল বলা হয়।

হেলথ ও মোটর ইন্স্যুরেন্সে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।


১৭. রাইডার (Rider)

রাইডার হলো—
👉 মূল পলিসির সাথে অতিরিক্ত সুবিধা যোগ করার অপশন।

যেমন:

  • দুর্ঘটনা রাইডার

  • ক্রিটিক্যাল ইলনেস রাইডার


১৮. ফ্রি-লুক পিরিয়ড (Free Look Period)

পলিসি নেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময় (সাধারণত ১৫ দিন), যার মধ্যে পলিসি বাতিল করা যায়।

ইন্স্যুরেন্স পলিসির টার্মগুলো না বুঝে পলিসি নেওয়া মানে অন্ধভাবে চুক্তি করা। ভবিষ্যতে ক্লেইমের সময় এই ছোট ছোট শব্দই বড় পার্থক্য তৈরি করে।

👉 সচেতন গ্রাহক হওয়ার প্রথম ধাপ হলো—টার্মগুলো পরিষ্কারভাবে বোঝা।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url