ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম: কী এবং কীভাবে নির্ধারণ হয়
ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম: কী এবং কীভাবে নির্ধারণ হয়
১. ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম কী
ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম হলো সেই নির্দিষ্ট অর্থের পরিমাণ যা একজন ব্যক্তি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে নিয়মিত (মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক) প্রদান করেন। বিনিময়ে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ঝুঁকির বিপরীতে আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করে।
সহজভাবে বলা যায়—
প্রিমিয়াম = আপনি সুরক্ষার জন্য যে টাকা প্রদান করছেন।
উদাহরণ:
-
রফিক একটি টার্ম লাইফ ইন্স্যুরেন্স নেন। কোম্পানি তার মৃত্যুর ঝুঁকি বহন করবে।
-
এজন্য রফিক প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা প্রিমিয়াম দেন।
-
এটি হলো তার আর্থিক “সুরক্ষা ফি”।
২. প্রিমিয়াম নির্ধারণের প্রধান উপাদান
ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো বিভিন্ন ফ্যাক্টর বিবেচনা করে প্রিমিয়াম নির্ধারণ করে। প্রধান ফ্যাক্টরগুলো হলো—
২.১ বয়স (Age)
-
বয়স যত বেশি, প্রিমিয়াম তত বেশি।
-
কারণ বয়স বাড়লে মৃত্যুর বা অসুস্থতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
উদাহরণ:
-
২৫ বছর বয়সী তরুণের প্রিমিয়াম ৩,০০০ টাকা হতে পারে
-
৫০ বছর বয়সীর জন্য একই কভারেজের প্রিমিয়াম ১০,০০০ টাকা হতে পারে
২.২ স্বাস্থ্য অবস্থা (Health Condition)
-
ভালো স্বাস্থ্য থাকলে কম প্রিমিয়াম, অসুস্থতা থাকলে বেশি প্রিমিয়াম।
-
প্রিমিয়াম নির্ধারণে সাধারণত চিকিৎসা রিপোর্ট ও মেডিকেল পরীক্ষা বিবেচনা করা হয়।
উদাহরণ:
-
একজন সুস্থ ব্যাক্তি মাসে ৫,০০০ টাকা প্রিমিয়াম দিতে পারে
-
হার্ট রোগ বা ডায়াবেটিস থাকলে প্রিমিয়াম ৭,০০০ টাকা হতে পারে
২.৩ জীবনযাপন ধরণ ও জীবনধারা (Lifestyle & Occupation)
-
ধূমপান, মদ্যপান, বিপজ্জনক কাজ (যেমন খনন বা নির্মাণ) থাকলে প্রিমিয়াম বেশি।
-
অফিস চাকরি বা কম ঝুঁকিপূর্ণ জীবনধারা হলে প্রিমিয়াম কম।
২.৪ প্রিমিয়ামের মেয়াদ ও পলিসির ধরন (Policy Type & Term)
-
টার্ম ইন্স্যুরেন্স vs লাইফ ইন্স্যুরেন্স:
-
টার্ম ইন্স্যুরেন্সে শুধুই কভারেজ থাকে → প্রিমিয়াম কম
-
লাইফ ইন্স্যুরেন্সে সঞ্চয় + কভারেজ → প্রিমিয়াম বেশি
-
-
দীর্ঘ মেয়াদের পলিসি → মাসিক প্রিমিয়াম কম,
কিন্তু মোট পরিশোধিত প্রিমিয়াম বেশি
২.৫ কভারেজের পরিমাণ (Sum Assured / Coverage Amount)
-
বড় কভারেজ → বেশি প্রিমিয়াম
-
ছোট কভারেজ → কম প্রিমিয়াম
উদাহরণ:
-
৫০ লাখ টাকার কভারেজের প্রিমিয়াম ১০,০০০ টাকা/মাস
-
২০ লাখ টাকার কভারেজের প্রিমিয়াম ৫,০০০ টাকা/মাস
২.৬ অতিরিক্ত সুবিধা (Riders / Add-ons)
-
কভারেজ বাড়াতে বা বিশেষ সুবিধার জন্য রাইডার যুক্ত করলে প্রিমিয়াম বৃদ্ধি পায়।
-
যেমন: Critical Illness Rider, Accidental Death Benefit
উদাহরণ:
-
৫০ লাখ টাকার টার্ম ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম: ১০,০০০ টাকা/মাস
-
Critical Illness Rider যুক্ত করলে: ১২,০০০ টাকা/মাস
৩. প্রিমিয়াম নির্ধারণের সূত্র (Basic Idea)
প্রিমিয়াম সাধারণত ঝুঁকি + খরচ + লাভ এর সমন্বয়ে নির্ধারণ করা হয়।
-
Risk Cost: কোম্পানি কত অর্থ প্রদান করতে হতে পারে মৃত্যুর/রোগের ক্ষেত্রে
-
Administrative Cost: পলিসি পরিচালনার খরচ
-
Profit Margin: কোম্পানির লাভ
৪. উদাহরণ
রাশেদ ৩০ বছর বয়সী, স্বাস্থ্যবান, টার্ম লাইফ ইন্স্যুরেন্স নিতে চান।
-
কভারেজ: ৫০ লাখ টাকা
-
মেয়াদ: ২০ বছর
-
ঝুঁকি গণনা: ২০ বছরের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা কম
-
স্বাস্থ্য ও জীবনধারা ভালো → প্রিমিয়াম কম
ফলাফল: মাসে প্রিমিয়াম ৫,০০০ টাকা
অন্যদিকে, যদি একই ব্যক্তি ৫০ বছর বয়সী ও ধূমপায়ী হন → প্রিমিয়াম ১০,০০০–১২,০০০ টাকা/মাস হতে পারে।
৫. প্রিমিয়াম কমানোর উপায়
-
ছোট কভারেজ নিন: বড় কভারেজের চেয়ে ছোট কভারেজে প্রিমিয়াম কম।
-
ঝুঁকিমুক্ত জীবনধারা: ধূমপান বা অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকিপূর্ণ কাজ এড়ানো।
-
তরুণ বয়সে পলিসি নেওয়া: ঝুঁকি কম → প্রিমিয়াম কম।
-
লং-টার্ম পলিসি বাছাই: মাসিক প্রিমিয়াম কম।
-
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: ভালো স্বাস্থ্য বজায় রাখলে কোম্পানি কম প্রিমিয়াম দেয়।
৬. সংক্ষেপে
-
ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম হলো আপনার আর্থিক সুরক্ষার জন্য নিয়মিত অর্থ প্রদান।
-
প্রিমিয়াম নির্ধারণে মূল ফ্যাক্টর: বয়স, স্বাস্থ্য, জীবনধারা, পলিসির ধরন ও কভারেজ।
-
ঝুঁকি কম হলে প্রিমিয়াম কম, ঝুঁকি বেশি হলে প্রিমিয়াম বেশি।
-
রাইডার ও অতিরিক্ত সুবিধা যুক্ত করলে প্রিমিয়াম বৃদ্ধি পায়।
মানবিকভাবে বলতে গেলে:
প্রিমিয়াম হলো “আপনার পরিবারকে বিপদের সময় আর্থিকভাবে নিরাপদ রাখার বিনিয়োগ”।