ইন্স্যুরেন্সে ট্যাক্স সুবিধা কীভাবে পাওয়া যায়
| How to Get Tax Benefits from Insurance |
(How to Get Tax Benefits from Insurance)
ইন্স্যুরেন্স সাধারণত মানুষ করে নিরাপত্তার জন্য—জীবন, স্বাস্থ্য বা সম্পদের সুরক্ষায়। কিন্তু অনেকেই জানেন না, ইন্স্যুরেন্স করার আরেকটি বড় সুবিধা হলো আয়কর (Tax) সাশ্রয়। সঠিকভাবে ইন্স্যুরেন্স ব্যবহার করলে একদিকে যেমন পরিবার সুরক্ষিত থাকে, অন্যদিকে তেমনি বৈধভাবে ট্যাক্স কমানো যায়।
এই লেখায় আমরা জানব—
-
কোন কোন ইন্স্যুরেন্সে ট্যাক্স সুবিধা পাওয়া যায়
-
কীভাবে সেই সুবিধা পাওয়া যায়
-
কী শর্ত মানতে হয়
-
কী ভুল করলে ট্যাক্স সুবিধা নষ্ট হয়ে যেতে পারে
১. ইন্স্যুরেন্সে ট্যাক্স সুবিধা বলতে কী বোঝায়
ইন্স্যুরেন্সে ট্যাক্স সুবিধা মানে হলো—
👉 সরকার নির্দিষ্ট কিছু ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়ামকে করযোগ্য আয় থেকে বাদ দেওয়ার সুযোগ দেয়।
ফলে—
-
মোট আয় কম দেখানো যায় (আইন অনুযায়ী)
-
করের পরিমাণ কমে যায়
এটিকে সাধারণত বলা হয়—
-
Tax Rebate
-
Tax Deduction
-
Tax Relief
২. কোন কোন ইন্স্যুরেন্সে ট্যাক্স সুবিধা পাওয়া যায়
সব ইন্স্যুরেন্সে ট্যাক্স সুবিধা নেই। সাধারণত নিচেরগুলোতে পাওয়া যায়—
২.১ লাইফ ইন্স্যুরেন্স
লাইফ ইন্স্যুরেন্স হলো ট্যাক্স সুবিধার দিক থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
কী সুবিধা পাওয়া যায়:
-
পরিশোধিত প্রিমিয়ামের একটি অংশ করমুক্ত
-
ম্যাচিউরিটি বা মৃত্যু ক্লেইম সাধারণত করমুক্ত
👉 পরিবার সুরক্ষা + ট্যাক্স সেভিং—দুই সুবিধা একসাথে।
২.২ হেলথ ইন্স্যুরেন্স
অনেক দেশে এবং সীমিত আকারে বাংলাদেশেও—
-
হেলথ ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়ামে ট্যাক্স সুবিধা দেওয়া হয়
-
বিশেষ করে করপোরেট বা গ্রুপ হেলথ পলিসিতে
👉 চিকিৎসা নিরাপত্তার পাশাপাশি ট্যাক্স সুবিধা।
২.৩ পেনশন বা এন্ডাওমেন্ট টাইপ পলিসি
যেসব ইন্স্যুরেন্স দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় বা পেনশন হিসেবে কাজ করে—
-
সেগুলোর প্রিমিয়ামেও কর ছাড় পাওয়া যায়
৩. বাংলাদেশে ইন্স্যুরেন্সে ট্যাক্স সুবিধা (সহজভাবে)
বাংলাদেশে সাধারণত—
৩.১ লাইফ ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়ামে কর রেয়াত
-
নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত লাইফ ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম
-
মোট আয়ের সাথে যুক্ত করে Tax Rebate হিসেবে দেখানো যায়
👉 অর্থাৎ আপনি যত প্রিমিয়াম দেন, তার একটি অংশ কর হিসাব থেকে বাদ পড়ে।
৩.২ ম্যাচিউরিটি ও ডেথ বেনিফিট
-
লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ম্যাচিউরিটি মানি
-
বা মৃত্যুজনিত ক্লেইম
👉 সাধারণত আয়করমুক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।
৪. ট্যাক্স সুবিধা পাওয়ার শর্তসমূহ
ইন্স্যুরেন্স করলেই অটোমেটিক ট্যাক্স সুবিধা পাওয়া যায় না। কিছু শর্ত মানতে হয়—
৪.১ নিয়মিত প্রিমিয়াম পরিশোধ
-
প্রিমিয়াম অবশ্যই সময়মতো দিতে হবে
-
অনিয়মিত হলে ট্যাক্স সুবিধা বাতিল হতে পারে
৪.২ বৈধ ও রেজিস্টার্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি
-
সরকার অনুমোদিত কোম্পানি হতে হবে
-
ভুয়া বা অবৈধ স্কিম হলে ট্যাক্স সুবিধা পাওয়া যাবে না
৪.৩ নিজের বা পরিবারের নামে পলিসি
সাধারণত ট্যাক্স সুবিধা পাওয়া যায়—
-
নিজের নামে
-
স্ত্রী/স্বামী
-
সন্তানের নামে করা ইন্স্যুরেন্সে
৪.৪ নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে
-
সরকার প্রতি বছর একটি সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে
-
তার বেশি প্রিমিয়ামে ট্যাক্স সুবিধা নাও পাওয়া যেতে পারে
৫. ট্যাক্স সুবিধা নেওয়ার ধাপ (Step by Step)
ধাপ ১: ইন্স্যুরেন্স পলিসি সংগ্রহ
লাইফ বা হেলথ ইন্স্যুরেন্স নিন।
ধাপ ২: প্রিমিয়াম রসিদ সংরক্ষণ
-
ব্যাংক স্লিপ
-
রসিদ
-
অনলাইন পেমেন্ট প্রুফ
👉 এগুলোই ট্যাক্সের প্রমাণ।
ধাপ ৩: ইনকাম ট্যাক্স রিটার্নে উল্লেখ
-
নির্দিষ্ট অংশে ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়ামের পরিমাণ লিখুন
-
প্রয়োজনে রসিদ সংযুক্ত করুন
ধাপ ৪: ট্যাক্স রেয়াত হিসাব
আপনার মোট আয় থেকে নির্ধারিত অংশ বাদ দিয়ে কর হিসাব হবে।
৬. বাস্তব উদাহরণ
উদাহরণ:
মাসিক আয় = ৫০,০০০ টাকা
বার্ষিক আয় = ৬,০০,০০০ টাকা
লাইফ ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম = ৫০,০০০ টাকা/বছর
👉 এই ৫০,০০০ টাকা কর হিসাবের সময় বিবেচনায় আনা হবে, ফলে কর কমবে।
৭. ইন্স্যুরেন্সে ট্যাক্স সুবিধা নেওয়ার সময় সাধারণ ভুল
❌ রসিদ না রাখা
❌ মেয়াদ শেষ হওয়া পলিসি দেখানো
❌ অবৈধ স্কিমে টাকা বিনিয়োগ
❌ পলিসির নাম ও ব্যক্তির নাম মিল না থাকা
এই ভুলগুলো করলে ট্যাক্স কর্তৃপক্ষ সুবিধা বাতিল করতে পারে।
৮. ইন্স্যুরেন্স বনাম শুধু ট্যাক্স সেভিং
অনেকে শুধু ট্যাক্স বাঁচানোর জন্য ইন্স্যুরেন্স করেন—এটি ঠিক নয়।
👉 আগে ভাবুন:
-
পরিবার নিরাপদ কি না
-
কভারেজ যথেষ্ট কি না
ট্যাক্স সুবিধা হলো অতিরিক্ত বোনাস, মূল উদ্দেশ্য নয়।
ইন্স্যুরেন্সে ট্যাক্স সুবিধা পাওয়া যায়—এটি সত্য। তবে সেই সুবিধা পেতে হলে—
-
সঠিক পলিসি নির্বাচন
-
নিয়মিত প্রিমিয়াম
-
সঠিক কাগজপত্র
-
আইন অনুযায়ী রিটার্ন দাখিল
এই বিষয়গুলো মানতে হয়।
ভালো ইন্স্যুরেন্স আপনাকে শুধু বিপদে রক্ষা করে না,
বরং বৈধভাবে আপনার ট্যাক্সের বোঝাও হালকা করে।