ইন্স্যুরেন্স স্ক্যাম থেকে বাঁচার উপায়

 

ইন্স্যুরেন্স স্ক্যাম থেকে বাঁচার উপায়


ইন্স্যুরেন্স স্ক্যাম থেকে বাঁচার উপায়
ইন্স্যুরেন্স স্ক্যাম থেকে বাঁচার উপায়


ইন্স্যুরেন্স হলো জীবন ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এটি মানুষকে অসুস্থতা, দুর্ঘটনা বা মৃত্যুর ফলে আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। কিন্তু ইন্স্যুরেন্সের বাজারে অনেক প্রতারক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কাজ করে যারা গ্রাহকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।

বর্তমান সময়ে অনলাইন এবং অফলাইনে ইন্স্যুরেন্স স্ক্যামের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সচেতন থাকা এবং নিরাপদ ইন্স্যুরেন্স নেয়ার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করা অপরিহার্য।

উদাহরণ:

  • একজন ব্যক্তি ফেক এজেন্টের মাধ্যমে প্রিমিয়াম পরিশোধ করেন।

  • দুর্ঘটনার পর কোম্পানি বা এজেন্ট কোন অর্থ প্রদান করেনি।

  • পরবর্তীতে দেখা যায় কোম্পানিটি লাইসেন্সহীন।

এই ধরনের ঘটনা থেকে বাঁচার জন্য গ্রাহককে সঠিক জ্ঞান থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১. ইন্স্যুরেন্স স্ক্যাম কী

ইন্স্যুরেন্স স্ক্যাম হলো এমন একটি প্রতারণা, যেখানে কোম্পানি বা ব্যক্তি গ্রাহকের অর্থ নিয়ে প্রতিশ্রুত সুবিধা দেয় না

স্ক্যামের উদাহরণ

  1. ফেক কোম্পানি বা এজেন্ট প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে আর অর্থ ফেরত দেয় না।

  2. অতিরিক্ত বা লুকানো চার্জ ধার্য করে।

  3. বাস্তবে যা নেই তা বলে গ্রাহককে প্রলোভিত করা।

  4. ক্লেইম নাকচ করা বা বিলম্ব করা।

সিদ্ধান্ত:
স্ক্যাম সচেতনতা এবং যাচাই-বাছাই ছাড়া সহজে চিহ্নিত করা কঠিন।

২. স্ক্যামের সাধারণ ধরন

ধরনবর্ণনাউদাহরণ
ফেক কোম্পানিলাইসেন্স ছাড়া কাজ করেঅজানা কোম্পানি থেকে প্রিমিয়াম নেওয়া
ফেক এজেন্টপরিচিত কোম্পানির নামে টাকা সংগ্রহশহরের নাম করা এজেন্টকে ভুয়া পরিচয় দেওয়া
Overchargingঅতিরিক্ত বা লুকানো চার্জপ্রিমিয়ামের চেয়ে ২০% বেশি নেওয়া
Over-promising Benefitsবাস্তবে যা নেই তা বলে প্রলোভন১০ দিনের মধ্যে দ্বিগুণ অর্থ লাভের গ্যারান্টি
ক্লেইম নাকচ বা বিলম্বজটিল প্রক্রিয়া তৈরি করামৃত্যুর পর প্রিমিয়াম ফেরত না দেওয়া

৩. ইন্স্যুরেন্স স্ক্যাম থেকে বাঁচার উপায়

৩.১ লাইসেন্স ও অনুমোদন যাচাই

  • নিশ্চিত করুন কোম্পানি রিজার্ভ ব্যাংক বা ইন্স্যুরেন্স রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত।

  • অনলাইনে কোম্পানির লাইসেন্স নম্বর যাচাই করুন।

উদাহরণ:
ভারতে IRDAI অনুমোদিত কোম্পানির তালিকা অনলাইনে পাওয়া যায়।

৩.২ এজেন্ট বা ব্রোকার যাচাই

  • এজেন্ট বা ব্রোকারের লাইসেন্স, পরিচয়পত্র ও কোম্পানির অনুমোদন চেক করুন।

  • অফিসিয়াল ভিজিট বা কল করে নিশ্চিত হোন।

উদাহরণ:
“XYZ Insurance Agent” বলে কেউ কাছে আসলে অফিসে ফোন করে যাচাই করুন।

৩.৩ প্রিমিয়াম ও কভারেজ স্পষ্টভাবে বুঝুন

  • কত দিতে হবে, কোন কভারেজ রয়েছে—সব লিখিতভাবে নিন।

  • লুকানো চার্জ বা অতিরিক্ত ফি থাকলে নিশ্চিত হন।

টিপস:

  • প্রিমিয়াম কেবল লিখিত ইনভয়েসে দিন।

  • কোনো অতিরিক্ত চার্জ থাকলে জিজ্ঞাসা করুন।

৩.৪ অনলাইন তথ্য যাচাই

  • কোম্পানি ও পলিসির বৈধতা অনলাইনে চেক করুন।

  • গ্রাহক রিভিউ ও অভিযোগ দেখুন।

  • অতিমূল্য বা “গ্যারান্টি লাভ” সাধারণত স্ক্যাম।

৩.৫ লেখা চুক্তি নিন

  • কোনো কথোপকথন বা মৌখিক প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করবেন না।

  • সব তথ্য লিখিত চুক্তিতে থাকা উচিত।

উদাহরণ:

  • এজেন্ট বললো “আপনার ১০% বেশি অর্থ পাবেন”—লিখিতভাবে নিশ্চয়তা নিন।

৩.৬ ক্লেইম প্রক্রিয়া জেনে নিন

  • ক্লেইম কিভাবে করতে হয়, কতদিনে টাকা পাওয়া যায়, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট কী—সব কিছু জেনে নিন।

  • স্ক্যাম কোম্পানি ক্লেইম প্রক্রিয়া জটিল করে।

৩.৭ সতর্ক থাকুন চরম প্রলোভন থেকে

  • “১০ দিনের মধ্যে ২ গুণ টাকা” বা “নিরাপদ বিনিয়োগ”—এগুলো সাধারণত স্ক্যাম।

  • ইন্স্যুরেন্স বাস্তবে ধীরে ধীরে অর্থ প্রদান করে, বড় লাভ গ্যারান্টি দেয় না।

৩.৮ ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা

  • PAN, Aadhaar, ব্যাংক একাউন্ট বা OTP কখনো অজানা কোম্পানিকে দেবেন না।

  • তথ্য দিয়ে ক্লোন বা চুরি হতে পারে।

৩.৯ অভিযোগ ও হেল্পলাইন ব্যবহার

  • কোনো সন্দেহ হলে দেশের ইন্স্যুরেন্স রেগুলেটরি অথরিটি বা কাস্টমার কেয়ার এ অভিযোগ করুন।

  • উদাহরণ:

    • India: IRDAI

    • Bangladesh: IDRA

৪. বাস্তব উদাহরণ

  1. ফেক এজেন্ট স্ক্যাম:

    • একজন ব্যক্তি অজানা এজেন্টের মাধ্যমে প্রিমিয়াম পরিশোধ করেন।

    • দুর্ঘটনার পর টাকা ফেরত পাওয়া যায়নি।

    • পরবর্তীতে দেখা যায় কোম্পানি লাইসেন্সহীন।

  2. Hidden Charges:

    • একজন গ্রাহক লাইফ ইন্স্যুরেন্স নেন।

    • পরে জানতে পারেন অতিরিক্ত ফি, যা এজেন্ট স্পষ্ট করেননি।

    • অভিযোগের মাধ্যমে রিফান্ড হয়, কিন্তু সময় ও মানসিক চাপ বেড়ে যায়।

৫. ইন্স্যুরেন্স বাছাই করার চেকলিস্ট

  1. কোম্পানির লাইসেন্স ও অনুমোদন যাচাই করুন

  2. এজেন্ট বা ব্রোকারের লাইসেন্স নিশ্চিত করুন

  3. লিখিত পলিসি ও শর্তাবলি পড়ে নিন

  4. কভারেজ ও প্রিমিয়াম স্পষ্টভাবে জেনে নিন

  5. অনলাইনে কোম্পানি ও পলিসি রিভিউ দেখুন

  6. কোনো অতিমূল্য বা অযৌক্তিক প্রলোভন এড়ান

  7. প্রয়োজনে কাস্টমার কেয়ার/রেগুলেটরি অথরিটি এ অভিযোগ করুন

৬. 

ইন্স্যুরেন্স স্ক্যাম থেকে বাঁচতে হলে সতর্কতা, যাচাই-বাছাই এবং সচেতনতা অপরিহার্য।

সারসংক্ষেপ:

  • প্রিমিয়াম দেওয়ার আগে সব তথ্য যাচাই করুন

  • কোম্পানি ও এজেন্টের লাইসেন্স চেক করুন

  • লেখা চুক্তি নিন, মৌখিক কথায় বিশ্বাস করবেন না

  • অতিরিক্ত প্রলোভন এড়িয়ে চলুন

  • সন্দেহ হলে রেগুলেটরি অথরিটি বা কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করুন

সতর্কতা অবলম্বন করলে আপনি ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে নিরাপত্তা পেতে পারেন, আর প্রতারণার শিকার হবেন না।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url